স্বার্থপর নারীর বৈশিষ্ট্য জানুন
স্বার্থপর নারীর বৈশিষ্ট্য জানুন,মানব পরিচর্যায় পরিবার, বন্ধুত্ব, কাজের
পরিবেশ‘সাহায্য’ ও ‘সহযোগিতা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো কখনো আমরা এমন
কাউকে পাই, যিনি সবকিছুকে নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন এবং প্রায়শই অন্যদের প্রতি
উদাসীন থাকেন।
সাধারণভাবে, স্বার্থপর শব্দটি নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়, কারণ তা অন্যদের চাহিদা
বা অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীলতা কম থাকার ইঙ্গিত দেয়। এখানে স্বার্থপর নারী বলতে
এমন একজন নারী বোঝানো হয়েছে, যিনি তার নিজস্ব স্বার্থকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
প্রাধান্য দেন, এমনকি তা অন্যদের প্রতি ক্ষতিকর হলে।
আরো পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি
পেজ সূচিপত্রঃ
স্বার্থপর নারীর বৈশিষ্ট্য জানুন
মানুষ সামাজিক প্রাণী তাকে টিকে থাকতে হলে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক, সহযোগিতা,
এবং সহানুভূতির প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান দ্রুতগামী সমাজে অনেক সময় দেখা
যায় কিছু নারী এমন আচরণ করেন, যেখানে তাদের চিন্তা, সিদ্ধান্ত ও অনুভূতির
কেন্দ্রবিন্দু শুধুই আমি। অন্যদের প্রয়োজন, অনুভূতি বা সীমাবদ্ধতা তারা খুব
একটা গুরুত্ব দেন না।
এই আচরণই ধীরে ধীরে স্বার্থপরতা বা Self-centered personality-তে পরিণত হয়।
স্বার্থপর নারীর বৈশিষ্ট্য কী
একজন স্বার্থপর নারীকে চেনার সবচেয়ে বড় উপায় হলো তার আচরণ ও যোগাযোগের ধরন।
নিচে পর্যায়ক্রমে সেসব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোঃ
সবসময় নিজের স্বার্থ আগে
তিনি সবসময় নিজের আরাম, সুবিধা ও সাফল্যকে প্রাধান্য দেন। কেউ কষ্টে আছে,
ব্যস্ত আছে—সেটি তার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার যুক্তি হয়: আমি না থাকলে
তো কিছুই চলবে না।
সহানুভূতির অভাব
অন্যের চোখের জল, মানসিক কষ্ট বা দুঃখ—এসব তার কাছে তেমন প্রভাব ফেলে না। তিনি
বলবেন, সবাই নিজের জন্য লড়তে হয়, যেন আবেগের কোনো জায়গাই নেই জীবনে।
সম্পর্ককে লাভের চোখে দেখা
তিনি সম্পর্ক রাখেন যতদিন তা তার জন্য “উপকারী” থাকে। সম্পর্কের মাধ্যমে যদি
সুবিধা না মেলে—সে বন্ধুত্ব বা প্রেম হোক—তিনি ধীরে ধীরে দূরে সরে যান।
অতিরিক্ত প্রশংসার চাহিদা
তিনি চান সবাই তার প্রশংসা করুক, তার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলুক। কেউ সামান্য
সমালোচনাও করলে দ্রুত রেগে যান বা মানসিকভাবে দূরত্ব নেন।
ভুল স্বীকারে অনীহা
স্বার্থপর নারীরা সাধারণত “আমি ভুল করেছি” এই বাক্য বলতে পারেন না। তারা
সবসময় যুক্তি খুঁজে বের করেন, যেন প্রমাণ করতে পারেন, “আমিই ঠিক।”
নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা
পরিবার, অফিস, বা বন্ধুত্ব—সব ক্ষেত্রেই তিনি চান পরিস্থিতি তার মতো চলুক।
অন্যদের মতামত তুচ্ছ মনে করেন।
দানশীলতার ঘাটতি
অর্থ, সময় বা স্নেহ—তিনি খুব হিসেব করে দেন। বিনিময়ে কিছু না পেলে সাহায্য করতে
অনীহা প্রকাশ করেন।
অস্থির মনোভাব
কখনও তিনি হাসিখুশি, আবার অল্প সময়েই ক্ষুব্ধ হয়ে যান। এই মানসিক ওঠানামা
আশেপাশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
দাম্পত্য, বন্ধুত্ব ও কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রভাব
দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত্তি হলো সহযোগিতা, ত্যাগ, এবং বোঝাপড়া। কিন্তু
স্বার্থপরতার উপস্থিতিতে সেই সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।
- আবেগগত দূরত্বঃস্বামী কষ্টে থাকলে তিনি তাকে সান্ত্বনা না দিয়ে বলেন, “আমি তো সারাদিন কাজ করেছি, এবার তুমি সামলাও।” এতে সম্পর্কের মধ্যে শীতলতা আসে।
- অতিরিক্ত দাবিঃতিনি সবসময় চান তার ইচ্ছা পূরণ হোক—ভ্রমণ, কেনাকাটা, মনোযোগ। কিন্তু স্বামীর চাহিদা বা মানসিক অবস্থা উপেক্ষিত থাকে।
- মানসিক দমনঃস্বার্থপর নারী অনেক সময় মানসিকভাবে সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন—অল্প অল্প করে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেন, যেন তিনিই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- যোগাযোগ ভেঙে যাওয়াঃএমন নারীর সঙ্গে তর্ক শুরু হলে সাধারণত তা যুক্তিতে নয়, আবেগে শেষ হয়। তিনি শোনেন না, কেবল বলেন। ফলে সম্পর্কের স্বচ্ছতা হারায়।
- ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যাওয়াঃধীরে ধীরে ভালোবাসা জায়গা করে নেয় হতাশা। স্বামী মনে করেন তিনি শুধু “একতরফা ভালোবাসা” দিচ্ছেন—ফিরে কিছু পাচ্ছেন না।
- ফলাফলঃদাম্পত্য সম্পর্ক হারায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আনন্দ ও নিরাপত্তা। অনেক সময় এই কারণেই বিচ্ছেদ বা মানসিক বিচ্ছিন্নতা ঘটে।
বন্ধুত্বে স্বার্থপর নারীর প্রভাব
- বন্ধুত্ব মানে বিশ্বাসঃ সহযোগিতা এবং একে অপরের পাশে থাকা। কিন্তু স্বার্থপর নারী বন্ধুত্বে তা একমুখী করে দেন।
- একতরফা সম্পর্কঃতিনি সবসময় চান বন্ধুটি তার কথা শুনুক, সমস্যা সমাধান করুক। কিন্তু অন্যের সমস্যায় তিনি অনুপস্থিত থাকেন।
- ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতাঃবন্ধু কিছু অর্জন করলে তিনি আনন্দিত না হয়ে ঈর্ষান্বিত হন। নিজের সাফল্যকে বড় করে দেখান, বন্ধুর অর্জনকে ছোট করে ফেলেন।
- গোপনীয়তার অপব্যবহারঃবন্ধুর গোপন কথা অন্যদের বলে বেড়ানো বা মজার বিষয় বানানো—এমন আচরণও তাদের মধ্যে দেখা যায়।
- সহানুভূতির ঘাটতিঃবন্ধু কষ্টে থাকলে তিনি বলেন, “সবাই তো এমন সমস্যায় পড়ে,”—অর্থাৎ অনুভব নয়, তুলনা।
- ফলাফলঃএমন বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দূরে সরে যায়, কারণ একতরফা সম্পর্ক কখনো ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না।
কর্মক্ষেত্রে স্বার্থপর নারীর প্রভাব
কাজের জায়গায় দলগত সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বার্থপর নারী সেখানে
নিজেদের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে ফেলেন।অন্যের কাজের কৃতিত্ব নেওয়া,তিনি টিমের
কাজের ফলাফল নিজের নামে দাবি করেন—“আমি না থাকলে এটা সম্ভবই হতো না।সহকর্মীর
প্রতি ঈর্ষা,সহকর্মী প্রমোশন পেলে বা প্রশংসা পেলে তিনি তা মেনে নিতে পারেন না,
কটাক্ষ বা গোপন সমালোচনা করেন।
সহযোগিতার অভাবঃটিমওয়ার্কে কাজ করার সময় তিনি নিজের দায়িত্ব সীমিত করে দেন এবং
অন্যের কাজের বোঝা ঠেলে দেন।আত্মপ্রচারের মানসিকতা,অফিস মিটিংয়ে বা সামাজিক
মাধ্যমে নিজেকে “সবচেয়ে সফল” হিসেবে উপস্থাপন করেন, যদিও তা পুরো টিমের অবদান।
কেন তারা এমন হয়ে ওঠে
স্বার্থপর নারীর এমন আচরণের কারণঃশৈশবের মানসিক পরিবেশ,যদি ছোটবেলায় বাবা-মা সবসময় বলেন,তুমি সেরা,সবকিছু তোমার জন্যই তাহলে শিশুটি ভাবে, পৃথিবী শুধুই তার জন্য।অন্যদিকে, যদি সে অবহেলা বা অবমূল্যায়নের শিকার হয়, তবে নিজেকে রক্ষার জন্য আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে পারে।
সামাজিক প্রতিযোগিতাঃআজকের যুগে নারীও প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে সৌন্দর্য, ক্যারিয়ার, সাফল্য সব কিছুতেই। এই প্রতিযোগিতা অনেক সময় নারীদের আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে।সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব,ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ফেসবুকের লাইক ও ফলোয়ার সংস্কৃতি নারীকে শেখায় তুমি যত বেশি নিজেকে দেখাবে, তত সফল।ফলে আত্মপ্রেম ও স্বার্থপরতার সীমা ঘুলিয়ে যায়।
আত্মবিশ্বাসের ভেতরের ভয়,অনেক সময় স্বার্থপরতা আত্মরক্ষার মাধ্যম। ভিতরে
অনিরাপত্তা কাজ করে, তাই বাইরে দৃঢ় ও আধিপত্যশীল হয়ে ওঠে।
কিভাবে সামলাবেন স্বার্থপর নারীকে
- সীমা নির্ধারণ করুনঃকোন পরিস্থিতিতে না বলতে হবে, তা ঠিক করুন। কাউকে খুশি রাখার জন্য নিজের সীমা অতিক্রম করবেন না।
- নিজের মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করুনঃস্বার্থপর আচরণে আপনি যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন। ধ্যান, বই পড়া, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এসব চর্চা করুন।
- বাস্তব প্রত্যাশা রাখুনঃতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সহানুভূতি বা ত্যাগ আশা করবেন না। সম্পর্ক বাস্তবভাবে মূল্যায়ন করুন।
- খোলামেলা আলোচনা করুনঃকখনো কখনো সরাসরি ও শান্তভাবে কথা বলা কার্যকর হতে পারে তোমার আচরণে আমি কষ্ট পাই, আমরা কি একসাথে এটা ঠিক করতে পারি?
- প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখুনঃযদি সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে যায়—অর্থাৎ আপনি বারবার মানসিকভাবে ক্লান্ত হন তাহলে নিজের মঙ্গলকে প্রাধান্য দিন।
স্বার্থপর নারীর পরিবর্তনের সম্ভাবনা
সব মানুষই পরিবর্তনযোগ্য, যদি তারা নিজেদের সমস্যা উপলব্ধি করে।
- আত্মসমালোচনা করার মানসিকতা তৈরি হলে,
- থেরাপি বা কাউন্সেলিং নিলে,
- সহানুভূতির অনুশীলন করলে
একজন স্বার্থপর নারীও ধীরে ধীরে সংবেদনশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারেন।
সামাজিক ও পারিবারিক প্রভাব
স্বার্থপর নারীর আচরণের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগেই সীমিত থাকে না এটি
পারিবারিক ও সামাজিক স্তরেও প্রসারিত হয়। নিম্নে কিছু প্রভাব উল্লেখ করা হলোঃ
পারিবারিক চাপ ও দূরত্ব
বিয়েও এমন একজন নারী পারিবারিক পরিবেশকে উত্তেজনাপূর্ণ ও উত্তাল করতে পারে।
সুষম ভাগ, সময় বিনিময়, অনুভূতির বিনিময় যেগুলি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি
সেখানে ঘাতসূত্র দেখা দেয়। স্বার্থপরতার কারণে স্বামী বা সন্তানরা বিব্রতবোধ
বা হতাশা অনুভব করতে পারে। এতে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
বন্ধুত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
সংবাদ, আদান-প্রদান, বন্ধুদের সাথে মজার কথা—এগুলো সাধারণভাবে সামাজিক বন্ধন
গড়ে তোলে। স্বার্থপর মানুষ এই দিকগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক
বা অক্ষম। সুতরাং তাদের সামাজিক বৃত্ত সীমিত হতে পারে, মানুষ তাদের কাছে দূরে
সরে যেতে পারে।
কাজের পরিবেশে সংঘাত
কর্মক্ষেত্রে দলগত কাজ, সহযোগিতা ও সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু
স্বার্থপর কর্মী দলের মধ্যে সমন্বয়, বিশ্বাস গড়ে তুলতে ব্যর্থ হতে পারে। তারা
নিজের আদর্শ ও স্বার্থকে অন্যদের সঙ্গে তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেবে—এতে
সহকর্মীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
মানসিক বিপর্যয় ও উদ্বেগ
অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ থাকলে সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে ক্লান্ত, বিষণ্নতা
অনুভব করতে পারে। যদিও প্রথমে তারা মনে করতে পারে তারা শক্ত বা স্বাধীন,
দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের অভাবে নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন।
কারণ ও মানসিক পটভূমি
কোনো মানুষ আচরণগতভাবে স্বার্থপর হয়ে ওঠে এর পিছনে বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক
কারণ কাজ করে। নিচে কিছু সম্ভাব্য কারণ আলোচনা করা হলোঃ
শৈশব ও পারিবারিক প্রভাব
- প্রচুর প্রশংসা ও অতিরিক্ত পোষণঃযদি কোনো মেয়েকে ছোট থেকেই বারবার বলা হয়, তুমি সবসময় সেরা হবে, তুমি বিশেষ, এবং সব অনুশীলনে পক্ষপাত করা হয়, তখন সে অন্যদের চাহিদা ও চাওয়া বুঝতে পারে না।
- আঘাত, অবমূল্যায়ন বা অবহেলাঃবিপরীতে, যদি কোনো নারী শৈশবে অবমূল্যায়ন বা অবহেলা পায়, সে আত্মরক্ষামূলক স্বার্থপরতা গঠন করতে পারে to protect her own feelings.
- সংঘাতপূর্ণ পরিবারিক পরিবেশঃবাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে অমিল, প্রতিযোগিতা, অভিমান সেসব পরিবেশে মেয়ে বড় হলে সে বিশ্বাস করতে পারে, স্বার্থবোধ ছাড়া জীবন চলবে না।
ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য
- উচ্চ নার্সিসিজম অহঙ্কারঃগবেষণায় দেখানো হয়েছে, যারা নার্সিসিস্টিক প্রবণতা বেশি, তারা অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব দেখাতে পারে।
- মনোবল ও অস্থির আত্মবিশ্বাসঃআড়ালে, এ ধরনের অবস্থায় মানুষ নিজেকে প্রগাঢ়ভাবে রক্ষা করার জন্য স্বার্থপরভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেন।
- সংকীর্ণ দৃষ্টি ও অতিরিক্ত যুক্তিবাদঃকিছু মানুষ অনুভূতির বদলে যুক্তি ও বিশ্লেষণকে অগ্রাধিকার দেন। অন্যের আবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে সবকিছুকে যুক্তিসম্পন্ন ধরা প্রাধান্য পায়।
মোকাবেলার কৌশল
যদি আপনার সম্পর্কের মধ্যে এমন একজন নারীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকে পারিবারিক,
বন্ধুত্ব বা কাজ তাহলে কিছু কৌশল প্রয়োগ করে আপনি সেই সম্পর্ক সাময়িকভাবে বা
দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে পারেন। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
- সীমা নির্ধারণঃস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন কোন বিষয় আপনি মেনে নেবেন, কোনটি করব না।প্রয়োজনে না বলার সাহস রাখুন এবং সেটি বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করবেন না।সীমা অতিক্রম হলে যেমন অতিরিক্ত দাবি, মানসিক চাপ সেই পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে আসুন।
- যোগাযোগ ও স্পষ্টতাঃশান্তভাবে আলোচনা করুন, অভিযোগ নয়। আমি অনুভব করি বা আমার জন্য এটি কষ্টদায়ক যে এই ধরনের ভাষার ব্যবহার কার্যকর হতে পারে।তাদের দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টা করুন, কিন্তু নিজেকে গার্নিসহীনভাবে সমর্পণ করবেন না।
- সহানুভূতির মডেল প্রদানঃআপনি যদি নিজেদের মধ্যে সহানুভূতির আচরণ দেখান তাহলে অনেক সময় প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিন, সময় দিন, সম্মান দেখান দেখুন তারা ধীরে ধীরে নমনীয় হতে পারে।
- সমর্থন ও পরামর্শ নেওয়াঃকাউন্সেলিং বা থেরাপির পরামর্শ নিতে পারেন, বিশেষ করে যদি সম্পর্ক অত্যন্ত প্রভাব ফেলতে থাকে।মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য আপনার নিজের জন্যও যত্ন নিন যোগ, ধ্যান, মানসিক বিশ্রাম।
- প্রত্যাশা পুনর্বিবেচনাঃকোনো সম্পর্ক থেকে যদি অনেক বেশি আশা রাখেন, সেটি হতাশার কারণ হতে পারে। প্রত্যাশাকে সীমিত করুন সম্মান, যোগাযোগ ও সঙ্গানুভবেই গুরুত্ব দিন।
- সতর্ক ঘরানার ম্যানেজমেন্টঃযদি পরিস্থিতি গতি হারায় অধিক আগ্রাসন, মানহানি তাহলে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করার সাহস রাখুন। অনেক সময় সম্পর্কের দূরত্ব আনাটাই শ্রেয় হতে পারে।
কিছু মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টান্ত ও উদাহরণ
নিচে কিছু কাল্পনিক বা সাধারণ উদাহরণ দেওয়া হলো, যা বৈশিষ্ট্যগুলোকে বাস্তব
রূপে প্রকাশ করতে সাহায্য করবেঃ
উদাহরণ ১: পারিবারিক উপহার বিতর্কঃরিতা (নাম পরিবর্তিত) তার স্বামী ও
সন্তানকে কিছু উপহার কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য তারা
রিতাকে জিজ্ঞাসা করার আগে তাকে সেই ব্যয় বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়। রিতা
অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সীমাবদ্ধতা বুঝতে না চাইতে, বলে ওঠে, আমি তো এটাই
চেয়েছিলাম, কেন তোমরা বাধা দাও? তিনি অন্যদের বাজেট, প্রয়োজন, অনুভূতি
বিবেচনা না করে শুধুই নিজের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেছেন এটি স্বার্থপরতার
একটি উদাহরণ।
উদাহরণ ২: কাজ এবং অবদানঃদীঘদিন ধরে একটি অফিস প্রকল্প চলছিল। যখন শেষভাবে
অর্থ বা প্রশংসা ভাগ হওয়ার কথা এলো, স্বার্থপর নারী প্রচুর অংশ দাবি করল,
যদিও প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে অবদান অন্যান্য সদস্যের থেকেও বেশি ছিল। আলোচনা
করতে যেয়ে তিনি বলে উঠলেন, আমি তো কাজ করেছি, বাকি সদস্যরা তো শুধু সহযোগিতা
করেছে। এই মনোভাব এগারোতে এক ধরনের স্বার্থপরতা তুলে ধরে অবদানকে
কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে ধরা।
উদাহরণ ৩: বন্ধুত্ব ও মনস্তাত্ত্বিক লাভঃমিতা ও সুমি দীর্ঘদিনের বন্ধু। সুমি
খুব কঠিন সময়ে পড়ে, মিতা তাকে মনোরোগিক সমর্থন করতে চায়। কিন্তু মিতা এক
সময় জানতে পারে, সুমি তাকে তেমনই ত্যাগ করে না, কথা বলার সময় সবকিছু তার
কাছে তার নিজের জীবনের প্রসঙ্গে ফিরিয়ে তোলে, বদলে সুমির অভিজ্ঞতা মিথ্যে বা
অসঙ্গত বলে তুচ্ছ করে দেয়। বন্ধুত্বের যে আদান-প্রদান হওয়া উচিত যেখানে
দুইজনই শোনে ও বুঝে সেটি ভগ্ন হয়ে যায়।
উপসংহার
একজন স্বার্থপর নারী বা যেকোনো স্বার্থপর ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব ও আচরণে এমন
গুণগুলি ধারণ করতে পারেন, যা তার এবং আশেপাশের মানুষদের জীবনে নেতিবাচক
প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি মানে এই নয় যে পরিবর্তন অসম্ভব। সচেতনতা, সীমা
নির্ধারণ, সংলাপ এবং প্রয়োজনে পেশাগত সহায়তা এসব উপায়ে সম্পর্ককে
পুনরুজ্জীবিত করা বা সঠিক পথে পরিচালিত করা যেতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url